সফট স্কিলস ডেস্ক
আমাদের প্রায় সবাইকেই কর্মক্ষেত্রে প্রথমে ছোট পদে কাজ শুরু করতে হয়। পরে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বড় পদে কাজ করার সুযোগ হয় এবং প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু সবাই ক্যারিয়ারে সমানভাবে এগিয়ে যেতে পারেন না। যাঁরা নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা ভালোভাবে রপ্ত করতে ও প্রয়োগ করতে পারেন, তাঁরা অন্যদের থেকে ক্যারিয়ারে দ্রুত উন্নতি করতে পারেন।
লিডারশিপ বলতে একদল লোক, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি উদ্যোগ, এমনকি একটি দেশের নেতৃত্বদানের ক্ষমতাকে বোঝায়। চলুন একজন লিডার এবং একজন বসের মধ্যে কী কী পার্থক্য থাকে তা জেনে নিই।
● লিডার সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন আর বস হুকুম করেন
একজন প্রকৃত লিডার সব সময় তাঁর টিমকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এবং সবচেয়ে বেশি কাজের দায়িত্ব তিনি নিজেই বহন করেন। আর কাজে সফল হওয়ার পর সাফল্যের কৃতিত্ব সবাইকে দেন।
অপরদিকে, একজন বস কাজের চাপ একদমই নেন না, সেটি বলা হতো ঠিক হবে না, কিন্তু বস সব সময় চেষ্টা করেন অধীনদের ওপর বেশির ভাগ কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে এবং পুরো কাজের কৃতিত্ব নিজে একাই নিয়ে নিতে।
● লিডারের থাকে ফলোয়ার আর বসের থাকে কর্মী
একজন প্রকৃত লিডারের থাকে অনেক ফলোয়ার। সেই লিডার যদি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানেও চলে যান, তারপরও সবাই তাঁকে অনুসরণ করেন এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন। একজন লিডার সবার প্রকৃত শ্রদ্ধা পান। সবাই তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় জানতে ও শিখতে আগ্রহী থাকেন।
অপরদিকে, একজন বস ওপরের পদে থাকায় সবাই হয়তো তাঁর কথামতো কাজ করেন, কিন্তু সবাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল না–ও থাকতে পারেন।
● লিডার অনুপ্রাণিত করেন আর বস ভীতি তৈরি করা
একজন প্রকৃত লিডার টিমের লোকজনকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলেন এবং সবাই মিলে একটি নির্দিষ্ট কাজকে বাস্তবায়ন করেন। লিডার অধীনদের মনে সাহস জোগান এবং তাঁদের অনুপ্রাণিত করেন।
অপরদিকে, একজন বস অধীনদের মনে ভীতি তৈরি করে কাজ আদায় করে নেওয়ার মানসিকতা রাখেন। অধীনদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে চান না।
● লিডার চান দীর্ঘস্থায়ী সমৃদ্ধি আর বস চান চটজলদি লাভ
একজন প্রকৃত লিডার সব সময় চেষ্টা করেন তাঁর টিমের লোকজনকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে একটি প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোগের বিভিন্ন সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং দীর্ঘস্থায়ী সমৃদ্ধি। লিডারের চিন্তা থাকে সুদূরপ্রসারী।
অপরদিকে, একজন বস সব সময় নজর দেন চটজলদি লাভের দিকে। দীর্ঘস্থায়ী উন্নতির পরিকল্পনার দিকে তাঁর নজর থাকে না।
● একজন লিডার সব সময় চান তাঁর অধীন কর্মীরা কাজ শিখে কর্মক্ষেত্রে তাঁর থেকেও এগিয়ে যাক। অপরদিকে, একজন বস সব সময় অন্যদের থেকে ওপরে থাকতে চান এবং অধীনদের ওপরের দিকে উঠতে দিতে চান না।
একজন ভালো লিডার হতে হলে যে দক্ষতাগুলো থাকা প্রয়োজন:
● টিম পরিচালনার ক্ষমতা
একজন লিডারকে টিম পরিচালনা করতে হয় এবং টিমের সব সদস্যকে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে একটি কাজ সুসম্পন্ন করতে হয়। তাই একজন লিডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে টিম পরিচালনা করার ক্ষমতা।
যদি একজন লিডার সঠিকভাবে একটি টিম পরিচালনা করতে না পারেন, তাহলে যতজন লোকবল দিয়ে যে পরিমাণ কাজ পাওয়া উচিত, সেই পরিমাণ কাজ প্রতিষ্ঠান পায় না।
টিম পরিচালনা করতে গেলে টিমের সদস্যদের অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করে কাজ করাতে হবে। তাঁদের সমস্যা বুঝতে হবে এবং তাঁদের কথা শুনতে হবে।
● পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন
একজন লিডার নতুন উদ্যোগ নেন, পরিকল্পনা করেন এবং টিমের সবাইকে নিয়ে তা বাস্তবে রূপদান করেন। একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ করেই ভালো লিডার হওয়া যায় না। একজন লিডারকে গৃহীত পরিকল্পনার বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়ে সেখান থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফলও অর্জন করতে হয়।
● কৌশলগত চিন্তাভাবনা
একজন লিডার কৌশলগত চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন। তিনি তীক্ষ্ণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে থাকেন। যেকোনো সমস্যা আগে থেকেই অনুমান করতে পারেন এবং কৌশলগতভাবে সেই সমস্যাটি সমাধানের প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন।
● যোগাযোগ দক্ষতা ও প্রভাবিত করার ক্ষমতা
একজন লিডার সবার সঙ্গে ভালো যোগাযোগ বজায় রাখবেন। যোগাযোগ বজায় রাখার পাশাপাশি একজন লিডারকে অন্যদের প্রভাবিত করার ক্ষমতাও থাকতে হবে।
লিডার তাঁর টিমের সদস্যদের অনুপ্রাণিত করবেন এবং ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করবেন। কেউ যেন তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
● নিয়মানুবর্তিতা
যেকোনো কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুসম্পন্ন করার জন্য নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলাবোধের কোনো বিকল্প নেই। একজন ভালো লিডার নিজে সব সময় সুশৃঙ্খল থাকেন এবং টিমের অন্যদেরও সুশৃঙ্খল রাখেন।
চাকরিদাতারা সব সময় যাঁদের মধ্যে লিডারশিপ স্কিল আছে, এমন কর্মী চাকরিতে নিতে চান। কারণ, ভালো লিডার প্রতিষ্ঠানকে সঠিক নেতৃত্বদানের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারেন। এ ছাড়া একজন উদ্যোক্তার মধ্যে যদি লিডারশিপ স্কিল না থাকে, তাহলে তাঁর পক্ষে কোনো উদ্যোগকে সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আসলে কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিজীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই লিডারশিপ স্কিলের গুরুত্ব অপরিসীম।